আমের মুকুল আসার পর করণীয় কি জানুন

কালোজিরার উপকারিতা ও খাওয়ার  নিয়ম জানুন এ টু জেটপ্রিয় পাঠক, আপনি হয়তো আমের মুকুল আসার পর করণীয় কি তা সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু সঠিক তথ্যটি খুঁজে পাচ্ছেন না। তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমের মুকুলে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে আম বিষাক্ত হচ্ছে কি না জানুন।
আমের-মুকুল-আসার-পর-করণীয়-কিনিচের এই আর্টিকেলে আমরা চেষ্টা করেছি আমের মুকুল আসার পর করণীয় কি, আমের কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রের ব্যবহার, আমের মুকুলে কোন সময় স্প্রে করা যাবে না, মুকুলে ছোট ছোট ফল বা গুটি আসার পর করণিয় কি, আম ফেটে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার, আমের ব্যাগিং এবং ফেরোমন ফাঁদ এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কিত তথ্য সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার। এছাড়াও এর সাথে সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি যেগুলো আপনার অনেক উপকারে আসবে। তাহলে এবার চলুন সেই সকল বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকাঃ আমের মুকুল আসার পর করণীয় কি

যাদের বাড়িতে বা বাসার ছাদে আমের গাছ আছে তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। কিছু বিষয়ে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি আপনি কাঙ্খিত ফলন পেতে চান তাহলে আমের গাছে আমের মুকুল আসার আগে থেকেই পরিচর্যা করতে হয়। কিন্তু যদি আগে থেকে পরিচর্যা নাও করে থাকেন তাহলে আমের মুকুল আসার পর অবশ্যই আপনাকে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। সেই বিষয়গুলোর মাধ্যমে আপনি আপনার আম গাছগুলো থেকে ভালো মানের ও ভালো পরিমাণ আমের ফলন পাবেন। আমরা জানি আম গাছে এক ধরনের পোকা থাকে। 
আমের-মুকুল-আসার-পর-করণীয়-কি
আম গাছের কাছে গেলে পটপট ধরনের শব্দ হয়। এটাকে বলা হয় আমের হপার পোকা। এই হপার পোকা দমনের জন্য আপনাকে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। হপার পোকা আমের মুকুলের ফুল থেকে রস চুষে খায়। যার ফলে সেই ফুলগুলো রস শুন্য হয়ে কালো হয়ে যায় এবং নষ্ট হয়ে যায়। তো আপনি যদি আপনার গাছ থেকে আম পেতে চান তাহলে আপনাকে সবার আগে মুকুল রক্ষা করতে হবে। এর জন্য আপনাকে স্প্রে করতে হবে।

আমের কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রের ব্যবহার

আমের মুকুল বের হয়েছে কিন্তু ফুলগুলো ফোটেনি। ঠিক এই অবস্থাতে আপনাকে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে টা হচ্ছে কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক দুটোর কম্বিনেশন। কীটনাশকের মধ্যে সাইপারমেথ্রিন অথবা ডেলটা মেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন।
যেমন - ডেসিস ২.৫ ইসি। এই কীটনাশকটি অত্যন্ত কার্যকর। প্রতি এক লিটার পানিতে এক এম এল পরিমাণ ডেসিস ২.৫ ইসি কীটনাশক মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। তাহলে হপার পোকা মারা যাবে। এর সাথে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে পারেন। যেমন ডাইথেন-এম৪৫। এই ছত্রাকনাশকটি ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে। এই দুটোর কম্বিনেশন ব্যবহার করলে আপনি গাছকে মোটামুটি ভাবে সুরক্ষা দিতে পারবেন।

আমের মুকুলে কোন সময় স্প্রে করা যাবে না জেনে নিন

ফুল ফুটে একটা গাছকে পরাগায়ন হতে হয়। আমরা দেখি আমের যখন মুকুলে ফুল ফোটে তখন কিন্তু প্রচুর মৌমাছি, মাছি এবং কিটপতঙ্গ একটা মুকুল থেকে আরেকটা মুকুলে ঘোরাফেরা করে। এ বিষয়টা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আম গাছের মুকুলে যদি ৫০% এর বেশি ফুল ফোটে তাহলে সেই গাছে কখনোই স্প্রে করা যাবে না। এর ফলে পরাগায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। এতে করে পোকা মরবে কিন্তু সেই মুকূলে ফল আসবে না। তাহলে বুঝতেই পারছেন কোন গাছের মুকুলে ৫০% এর বেশি ফুল ফুটলে সেই গাছে স্প্রে করার প্রয়োজন নেই।

আরেকটি কাজ করা যেতে পারে সেটা হচ্ছে ফ্লোরা স্প্রে করা। ফ্লোরা আসলে এক ধরনের হরমোন সেটা বাজারে পাওয়া যায়। এটা গাছের ফুল এবং ফল ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই এটা করা যেতে পারে। তবে আপনি যদি কোন ধরনের স্প্রে না করতে চান বা না করেন তাহলে আম গাছে পানি দিতে হবে।

গাছে যদি পানির স্বল্পতা দেখা দেয় তাহলে আমের মুকুলের ফুলের বোটায় একটা লেয়ার থাকে সে লেয়ারটা পানিশূন্য হয়ে ঝরে পড়ে যায়। এমনটা হয় যে গাছের সমস্ত মুকুল ঝরে পড়ে যায় শুধুমাত্র পানির অভাবে। এজন্য লক্ষ্য করতে হবে মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রস আছে কিনা।
আর আম গাছে পানি দেয়ার নিয়ম হচ্ছে যদি বড় গাছ হয় তাহলে সূর্য যখন মাথার উপরে অবস্থান করে ওই সময় গাছের ছায়া যতটুকু জায়গা জুড়ে পড়ে ততদূর জায়গা জুড়ে গোল বা সার্কেল করে একটা নালী করতে হবে। তারপর সেখানে পানি দিতে হবে যেন গাছের শিকড় গুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে রস পায়। যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে ১০-১২ দিন পর পর এরকম ভাবে পানি দিতে হবে।

মুকুলে ছোট ছোট ফল বা গুটি আসার পর করণিয়

মুকুল থেকে যখন দানার মত ছোট ছোট আমের গুটি হবে তখন আপনাকে আরেকবার কীটনাশক এবং ছত্রাক নাশকের এই কম্বিনেশন টা মিলে স্প্রে করতে হবে। কারণ এই সময় যদি পোকার আক্রমণ হয় তাহলে পোকা আবারও রস চুষে ফলগুলো নষ্ট করে ফেলবে।
এরপর যখন আম গুলো গোল গোল দানা থেকে মার্বেলের আকৃতি হবে তখন আপনাকে আরো কিছু কাজ করতে হবে। এই সময়টাতেও মাটিতে পানি বা রসের বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে। আর এই সময়টাতেও আরেকবার স্প্রে করতে হবে।

এক্ষেত্রেও সাইপারমেথ্রিন অথবা ডেলটা মেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক এবং সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করেন তাহলে আপনার গাছ কিন্তু সুরক্ষা পেয়ে গেল। গাছে মুকুল আসার আগে থেকে যদি বোরন ব্যবহার না করে থাকেন তাহলে আমের মুকুল আসার পর ফুল থেকে যখন গুটি হয়ে যাবে তখন আপনি বোরন ব্যবহার করতে পারেন। এ সময় বোরন যদি স্প্রে করা হয় তাহলে মুকুলের ফুল এবং ফল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।

আমের মুকুলে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে আম বিষাক্ত হচ্ছে কি না জানুন

আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে বা মনে হতে পারে যে এত কেমিক্যাল গাছে দিচ্ছি এটা বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে কিনা বা এটা আমাদের জন্য নিরাপদ থাকছে কিনা। আসলে বিষয়টা হলো আমের মুকুল আসা থেকে শুরু করে আম পাকা পর্যস্ত এর মধ্যে অনেক সময় থাকে। তার জন্য প্রথমদিকে কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক এর ব্যবহারগুলো করতেই হয়। তার কারণ হলো আমাদের যে অবস্থান আমরা সারা বছর আম গাছের পরিচর্যা করতে পারিনা বা করি না। 

গাছগুলো ঝোপালো বা একটা নোংরা পরিবেশের ভিতর থাকে। সেজন্য গাছে প্রচুর পোকামাকড় এর বাসা এবং ছত্রাক থাকে। মূলত সেই জন্যই কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক এর ব্যবহারটা করতেই হয়। আম যখন বড় হয় তখন কিন্তু একটা সমস্যা হয় সেটা হল যে আমের ভিতর পোকা থাকে। 

আম কাটলে আমের ভেতরে পোকা দেখা যায়। সেজন্য আম খাওয়া যায় না। আম যখন মার্বেল আকৃতির হয় তখন আমের ফল ছিদ্র কারি পোকা আমের চামড়ার ঠিক নিচে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে লার্ভা গুলো আস্তে আস্তে আমের ভিতরে চলে যায়। একটা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। যার ফলে আম বড় হওয়ার সাথে সাথে পোকা ভিতরে থেকে যায়।
পরবর্তীতে ঐ আম কাটলে পোকা দেখা যায়। এটা হলো আমের ফল ছিদ্রকারী পোকা। এখানে পোকার হাত থেকে বাঁচতে আমরা কীটনাশক স্প্রে করতে পারি। তবে সারা বছর জুড়ে আম গাছের যত্ন বা পরিচর্যা করলে আমের গুটি আসার পর আর এই কীটনাশকের তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। যার ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে না।

আমের ব্যাগিং এবং ফেরোমন ফাঁদ এর ব্যবহারবিধি

আম যখন একটু বড় হয় তখন আমের ব্যাগিং করতে হয়। এই ব্যাগিংটা করতে হয় আমের মাছি পোকার প্রতিরোধ করার জন্য। আমরা অনেক সময় দেখি আমের গায়ে ছোট্ট ফুটা থাকে এবং কাটলে ভিতরে সাদা সাদা পোকা দেখা যায়। এটাকে বলা হয় আমের মাছি পোকা। আমের এই মাছি পোকা দমনের জন্য কাগজের ব্যাগ প্রতিটা আমের সাথে ব্যাগিং করতে হবে।
এটা করতে পারলে কোন প্রকার কেমিক্যালস ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। আর যদি এতগুলো কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ফেরোমন ফাঁদ এর মাধ্যমে পোকা দমন করা যায়। এই ফেরোমন ফাঁদ বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। যদি মাঝারি সাইজের গাছ হয় তাহলে একটা ফেরোমন ফাঁদই যথেষ্ট।

আম ফেটে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার

আমরা দেখতে পাই যে অনেক সময় গাছে আম ফেটে যায়। বিশেষ করে আমরুপালি আমের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা বেশি লক্ষ্য করা যায়। এই আমগুলো হঠাৎ করে ফেটে যায়। এই ফাটাটা দুই কারণে হতে পারে। একটা কারন হল বোরন ডেফিসিয়েন্সির জন্য হতে পারে।
আর আরেকটা কারণ হলো আমরুপালি যেহেতু বাজারে একটু দেরিতে আসে বা দেরিতে পাওয়া যায়। আর ওই সময়টাতে বৃষ্টি কমই হয়। তো যখন হঠাৎ করে অনেকদিন পর বৃষ্টি হয় এর ফলে আমটা ফেটে যায়। কারণ বৃষ্টি হলে আম বাড়ে বা বড় হতে থাকে কিন্তু আমের চামড়াটা ওইভাবে বাড়তে পারেনা।

যার কারণে ফেটে যায়। এজন্য আপনাকে নিয়মিত সেচ দিতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে যে আম গাছের মাটিতে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে রস থাকে। আপনি যদি নিয়মিত সেচ দিয়ে থাকেন তাহলে হঠাৎ করে বৃষ্টি হলেও আম ফাটার কোন সম্ভাবনা থাকবে না। আম ফাটার আরও একটি কারণ আছে সেটা হল পোকার আক্রমণ। এই পোকার আক্রমণ ঠেকাতে সেজন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন অথবা আমে ব্যাগইন করতে পারেন। তাহলে আম ফাটবে না।

শেষ কথাঃ আমের মুকুল আসার পর করণীয় কি

ওপরের আলোচনা থেকে এটা লক্ষ্য করা যায় যে, আপনি যদি শুরু থেকে, অর্থাৎ বছরের শুরু থেকে সারা বছরই যদি আপনি আম গাছের পরিচর্যা বা যত্ন করেন, যেমন - অতিরিক্ত ডালপালা কেটে রাখা, আম গাছের নিচে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, গাছের আশেপাশের আগাছা গুলো যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখেন তাহলে এত প্রিপারেশন এর দরকার হবে না।
প্রিয় পাঠক, আপনি আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারলেন আমের মুকুল আসার পর করণীয় কি, কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক এর ব্যবহারবিধি ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারলেন। তাই আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনি উপকৃত হবেন এবং এর মাধ্যমে আপনার বন্ধু এবং প্রিয়জনদের উপকৃত হতে সাহায্য করবেন।

আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে কিংবা আপনার কোন উপকারে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু, প্রিয়জন বা পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করবেন। আর্টিকেলটি পড়ে তারাও উপকৃত হতে পারে। আপনার যদি আরোও কিছু জানার ইচ্ছে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। আমরা চেষ্টা করবো সেগুলোর উত্তর দেওয়ার। আজ এই পর্যন্তই পুরো পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এসএস রাইফেল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url