বাত ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে বিস্তারিত জানুন

শরীরের ফিটনেস ধরে রাখার সহজ উপায় ২০২৫প্রিয় পাঠক, এসএস রাইফেল আইটিতে আপনাকে স্বাগতম। এই ওয়েবসাইটে আমরা স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আজকে আমরা বাত ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে বিস্তারিত আলোচনা করবো এবং বাত ব্যথা হলে করনীয় কি তা সম্পর্কেও আলোচনা করবো।
বাত-ব্যথা-থেকে-মুক্তি-পেতে-বিস্তারি-জানুন
নিচের এই আর্টিকেলে আমরা চেষ্টা করেছি বাত ব্যথা থেকে মুক্তি সম্পর্কিত সঠিক তথ্য সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার। এছাড়াও এর সাথে সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি যেগুলো আপনার অনেক উপকারে আসবে। তাহলে এবার চলুন সেই সকল বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকাঃ বাত ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে বিস্তারিত

বাত-ব্যথা-থেকে-মুক্তি-পেতে-বিস্তারি-জানুন
সহজ ভাবে বলতে গেলে বাত ব্যথা বলতে বয়স বাড়ার সাথে সাথে মাংসপেশীতে এবং হাড়ের সন্ধিস্থলে ব্যথা বাড়ে বা ব্যথা হয় তাকে বাত ব্যথা বলে। বাদ শব্দটি চিনে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এই শব্দটি আমাদের সমাজে খুবই আলোচিত শব্দ। আমাদের হাড়ের বিভিন্ন জয়েন্টের গিরায় গিরায় ব্যথা বা শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা করলে তাকে বাত ব্যথা বলে।
এছাড়াও আমাদের ঘাড় বা কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে এবং এই ব্যথা পা কিংবা হাতের দিকে ছড়িয়ে যায় তাকেও বাত ব্যথা বলে। বাত ব্যথার বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। ডাক্তারদের ভাষায় এই ব্যথাকে আর্থ্রাইটিস বলা হয়।

বাত ব্যথার সঠিক তথ্য জানা কেন জরুরী

আমরা জানি বাত ব্যথা আমাদেরকে নানা রকম ভাবে সারা জীবন ধরে ভোগায়। এবং দেখা যায় যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানুষজন অপ-চিকিৎসা শিকার হয়ে থাকেন। তারা সঠিক সময়ে সঠিক ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না এবং একই সাথে কিছুদিন ব্যথার ওষুধ খায় এবং সেই ব্যথার ওষুধ তাদেরকে এক পর্যায়ে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যায় সেখানে কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়। সে লক্ষ্যে সঠিক চিকিৎসা তথ্য পাওয়ার জন্য এবং বাত ব্যথার যে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে সেটি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা জরুরী।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও অস্টিওপোরোসিস কেন হয়

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ না করা, পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি সংশ্লেষণ না হওয়া এবং এর সাথে অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রম করার ফলে হাড় ক্ষয়ের সম্ভাবনা থাকে। আবার বেশি পরিশ্রম না করার ফলে মেনোপোজ ও স্থুলতা অস্টিওআর্থ্রাইটিস এর কারন হয়ে দাড়ায়। ক্যালসিয়ামের অভাব বা ঘাটতি হলে হাড়ের ভেতরের অংশ ফাঁপা হয়ে যায় বা ঘনত্ব কমে যায়। হাড়ের এই ঘনত্ব কমে যাওয়া বা ফাঁপা হয়ে যাওয়াকে অস্টিওপোরোসিস বলা হয়। যার কারণে হাড় জীর্ণ হয়ে যায় এবং একই সাথে যে কোন সামান্য আঘাতের ফলে ফ্র্যাকচার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

অটোইমিউন রোগ কি

ডাক্তারদের পরিভাষায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন শরীরের ভালো কোষ বা টিস্যুর বিরুদ্ধে, নিজের বিরুদ্ধে নিজেই যখন কাজ করা শুরু করে তাকে বলা হয় অটোইমিউন রোগ। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে এই রোগ যাদের আছে তার বেশিরভাগই জ্বিনগতভাবে হয়ে থাকে। অর্থাৎ ওই জ্বিনটি তার মধ্যে আগে থেকেই রয়েছে।
এই জ্বিনগুলো সাধারণত সুপ্ত অবস্থায় থাকে। কোন কারনে যেমন কোন ইনফেকশন বা কোন ভারী ধাতুর ক্রিয়া বা কোন খাদ্যে বিশ ক্রিয়া কিংবা দীর্ঘমেয়াদি কোন আমাশয় বা চর্মরোগ বা এমন কোন ডিএনএ মিউটেশন করেছে বা এমন কোনো রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসে তখন সেই সুপ্ত জ্বিনগুলো কিন্তু জেগে ওঠে।

সেই সাথে এমন কিছু এন্টি বডি তৈরি করে যেগুলো তার ভালো কোষ বা টিস্যু যেমন অস্থি সন্ধি হতে পারে, রক্তনালী হতে পারে, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, কিডনি এ সমস্ত ভালো অঙ্গের বিরুদ্ধে এ সমস্ত এন্টিবডি গুলো নিজের বিরুদ্ধে নিজেই কাজ করে। মানে হল নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধাচরণ শুরু করে দেয়।

প্রদাহ জনিত বাত ব্যথা বা ইনফ্লাম্যাটরি ডিজিজ

আধুনিক বিজ্ঞান যেটা বলছে যাদের আগে থেকেই পেটে সমস্যা থাকে যেমন দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য বা মল ঠিকমত না হওয়া আবার দীর্ঘমেয়াদি আমাশয় বা ডায়রিয়া বা যে কোন ইনফেকশন যেমন ধরুন চিকনগুনিয়া, ডেঙ্গু , করোনা কিংবা যেকোনো ধরনের ভাইরাস জনিত ইনফেকশন হলে এই সমস্ত এন্টিবডি গুলো জেগে ওঠে।
কারণ জ্বিনগতভাবে ওই রোগীটি আগে থেকেই এইজ্বিন পেয়ে আছে। এ সমস্ত রোগগুলোকে বলা হয় প্রদাহ জনিত বাত ব্যথা। এই প্রদাহ জনিত বাত বা ব্যথাগুলো মূলত রিউমাটলজি বা বাত বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়।

রিউমাটোলজিস্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর কাছে কখন যাবেন

রিমোটোলজিস্ট এর কাছে যাওয়া প্রয়োজন হবে তখনই যদি এমন কোন ব্যথা যেমন - সাধারণত গিটের ব্যথা বা জয়েন্ট পেইন বা আর্থ্রাইটিস এগুলো হল বাত ব্যথার প্রধান লক্ষণ। এগুলো ব্যাথা এমন হয় যে বিশ্রাম নিলে বা সকালে ঘুম থেকে উঠলে বা পরিশ্রম করলে বা একটু নড়াচাড়া করলে ভালো থাকছে।

আরো বিশেষ ধরনের কিছু ব্যথা আছে। যেমন একটা জয়েন্ট থেকে আরেকটা জয়েন্টের ব্যথা যদি মুভমেন্ট করে সেটা আরেক ধরনের ব্যথা। আবার আরো কিছু ব্যথা আছে যেমন দুই হাটু বা দুই পা এরকম জাতীয় জোড়ায় জোড়ায় ব্যথা হয় এবং এই ব্যথাগুলোর সাথে যদি অস্থিসন্ধি গুলো ফুলে যায় বাউ অস্থিসন্ধিগুলো লাল হয়ে যায়।
 
ত্বকে চামড়ায় রেস হতে পারে সেই রেস হতে পারে ত্বকে, মুখে, গালে বা বিভিন্ন জায়গায়। আঙ্গুলের বর্ণ গুলো সাধারণত গোলাপী থাকে সেগুলো যদি অন্য কোন বর্ণ ধারণ করে যেমন শীতকালে বা ঠান্ডার সংস্পর্শে আসলে সে বর্ণ যদি চেঞ্জ হয়ে যায় এবং তা নীল, লাল বা সাদা হতে পারে। আবার অনেক সময় অকারনে গর্ভপাত হয়ে যায় কোন প্রকার গাইনি সমস্যা ছাড়াই। উপরের এই সমস্ত সমস্যা গুলি হলে বা দেখা দিলে অবশ্যই একজন রিমোটলজিস্ট ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

বাতের ব্যথা হলে করনীয় কি

মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার শারীরিক শক্তি, মানসিক শক্তি এবং দেহকোষের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায়। টিস্যুর এই সামর্থ্যের এই কর্মক্ষমতা বিভিন্ন বয়সের ব্যক্তিদের উপর বিভিন্ন রকম অনুপাতে হয়ে থাকে। যেমন ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সের ব্যক্তিরা বিভিন্ন ধরনের বার্ধক্য জনিত সমস্যা জয়েন্ট বা মাংসপেশির ব্যথায় ভুগতে পারেন।
 
সহজ ভাষায় যাকে আমরা বাত বলে থাকি। এই ক্ষেত্রে মহিলাদের বয়স যখন ৪০ বছর পার হয় এবং পুরুষদের বয়স যখন ৫০ বছর পার হয় তখন তারা বয়স জনিত জয়েন্টের সমস্যায় ভুগে থাকেন এবং এসব জয়েন্ট গুলো শরীরের ওজন বহন করে থাকে ও অতিরিক্ত ব্যবহৃত হয়।

যেমন - ঘাড, কোমর, সোল্ডার জয়েন্ট এবং হাঁটু ব্যথার রোগী সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। বাত ব্যথার অনেক কারণ রয়েছে। তবে এই বাত ব্যথার প্রায় ৯০ ভাগ কারণ হচ্ছে মেকানিক্যাল সমস্যা। মেকানিক্যাল সমস্যার মধ্যে রয়েছে মাংসপেশি, লিগামেন্ট মচকানো বা আংশিক ছিড়ে যাওয়া, দুই কুশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্ক সমস্যা। অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বয়স জনিত হাড় ও জোড়ার ক্ষয়, মাংসপেশির রোগ, টিউমার, ক্যান্সার, টেন্ডিনাইটিস, শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ওজন, অপুষ্টিজনিত সমস্যা ইত্যাদি। এভাবে চলতে রোগী তার দেহের জয়েন্টের জোরার কর্মক্ষমতা বা নড়াচড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে বা অকেজো হয়ে যায়।
 
এক পর্যায়ে রোগী পঙ্গুত্ববরণ করতে পারে। অনেক সময় দীর্ঘদিন ধরে রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকার ফলে শরীরের মাংসপেশিগুলো শুকিয়ে যেতে পারে। তাই বাতের ব্যথা নিয়ে কষ্ট না পেয়ে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিতে হবে এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যেসব রোগীরা বাতের ব্যথায় ভূগছেন তারা অবশ্যই একজন রিউমাটোলজিস্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর চিকিৎসা ও পরামর্শ নিতে পারেন। কিংবা একজন ভালো ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের চিকিৎসা ও পরামর্শে ভাল থাকতে পারেন।

লেখকের মন্তব্যঃ বাত ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনি ওপরের আর্টিকেলের মাধ্যমে বাত ব্যথা কি? বাত ব্যথার কারন, বাত ব্যথা হলে করনীয় কি এবং বাত ব্যথা সম্পর্কিত অনেক তথ্যই জানতে পারলেন। তাই আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনি উপকৃত হবেন এবং এর মাধ্যমে আপনার প্রিয়জনদের উপকৃত হতে সাহায্য করবেন। 

আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে কিংবা আপনার কোন উপকারে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু, প্রিয়জন বা পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করবেন। আর্টিকেলটি পড়ে তারাও উপকৃত হতে পারে। আপনার যদি আরোও কিছু জানার ইচ্ছে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। আমরা চেষ্ট করবো সেগুলোর উত্তর দেওয়ার। আজ এই পর্যন্তই। সব সময় সুস্থ্য থাকবেন এবং ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এসএস রাইফেল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url