কম্পিউটার কেনার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল করবেন এ টু জেট
ভূমিকাঃ কম্পিউটার কেনার আগে যে তথ্য গুলো আপনাকে জানতে হবে
কম্পিউটার কেনার সময় প্রথমে কয়েকটি জিনিসের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে। যেখান থেকে কম্পিউটার কিনবেন সেইখানকার সেই দোকান ক্রেতাদের কেমন গ্রাহক সেবা দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনাকে পরিচিতরা সাহায্য করতে পারে। বাজার অনেক সময় খোলা হার্ডওয়ার পাওয়া যায়। এগুলো কখনো কিনবেন না।
আপনি কম্পিউটার এক্সপার্ট না হলেও অন্ততপক্ষে Processor, Motherboard, RAM, HDD, ODD, Graphics Card, Casing এগুলো একই দোকান থেকে কিনবেন। তারা আপনাকে এগুলো সঠিকভাবে কনফিগার করে দিবে। এবার আমি আপনাদেরকে কম্পিউটারের প্রত্যেকটি মূল আলাদা আলাদা পার্টস সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব এবং এগুলো কেনার সময় কি কি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে সে সম্পর্কেও ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব।
প্রসেসর (Processor) --
প্রথমেই বলবো প্রসেসরের কথা। প্রসেসর হল কম্পিউটারের প্রধান জিনিস। এটাকে কম্পিউটারের প্রাণও বলা হয়। প্রসেসর কম্পিউটারের সকল কাজ করে থাকে। মূলত একেই সিপিইউ বলে। প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ইন্টেল।
আরও পড়ুনঃ অনলাইনে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড চেক করার নিয়ম জানুন ২০২৫
প্রসেসরের সিরিজ কি সেটা খেয়াল করতে হবে। সিরিজ যত উন্নত হবে আপনার কম্পিউটারের স্পিড তত বাড়বে। প্রসেসর গুলোর মধ্যে Core-i3, Core-i5, Core-i7 এবং Core-i9 জনপ্রিয়। একটি ভালো মানের পিসি বিল্ড করতে হলে অবশ্যই আপনাকে একটি ভালো মানের প্রসেসর বেছে নিতে হবে।
আপনি যদি ভারী প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই আপডেট জেনারেশনের প্রসেসর নিতে হবে। যেমন Intel Core-i3, core-i5, core-i7, core-i9 এর ১০ জেনারেশন, ১১ জেনারেশন, ১২ জেনারেশন, ১৩ জেনারেশন এবং ১৪ জেনারেশন। কিন্তু আপনি যদি মোটামুটি ধরনের কাজ করতে চান তাহলে core-i5 এর ১০ জেনারেশন থেকে ১৪ জেনারেশন এর একটি প্রসেসর নিতে পারেন।
এর সাথে ৮ জিবি RAM, একটি ভাল মানের M.2 NVME এবং ২ জিবি গ্রাফিক্স কার্ড দিয়ে যদি একটি পিসি বিল্ড করেন এই কনফিগারের কম্পিউটার দিয়ে কিন্তু মোটামুটি সব ধরনের কাজ করা সম্ভব হবে। আর আপনি যদি নরমাল কাজ করতে চান তাহলে core-i3 অথবা core-i5 এর ৪ জেনারেশনের প্রসেসর নিতে পারেন।
মাদারবোর্ড (Motherboard) --
মাদারবোর্ডে কম্পিউটারের সকল যন্ত্রাংশ যুক্ত থাকে। মাদারবোর্ড কিনার আগে অবশ্যই প্রসেসর সাপোর্ট হতে হবে এরকম টা দেখে মাদারবোর্ড কিনবেন।কম্পিউটার হার্ডওয়ার পার্টস গুলোর মধ্যে মাদারবোর্ড খুব ইম্পরট্যান্ট একটা পার্টস। মাদারবোর্ড দুই সিরিজের হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ চুলপড়া সমস্যার সমাধান করুন ঘরোয়া উপায়ে
একটি হলো ইন্টেল এবং আরেকটা হলো এএমডি। আপনি ইন্টেল মাদারবোর্ড নিবেন নাকি এএমডি মাদারবোর্ড নিবেন এটা কেনার ক্ষেত্রে দুটো জিনিস সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করতে হবে। একটা হচ্ছে ভ্যালুয়েবল ব্র্যান্ড এবং আরেকটা হচ্ছে কোন জেনারেশনের মাদারবোর্ড আপনি নিবেন।
আপনি যদি মোটামুটি ভারী প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করতে চান যেমন ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যানিমেশন গেমস তাহলে আপনাকে অবশ্যই আপডেট জেনারেশনের মাদারবোর্ড চুজ করতে হবে। সেটা হতে পারে ১০ জেনারেশন, ১১ জেনারেশন, ১২ জেনারেশন, ১৩ জেনারেশন এবং সর্বশেষ ১৪ জেনারেশনের মাদারবোর্ড।
কিন্তু আপনি যদি নরমাল কাজগুলো করতে চান যেমন - অফিস প্রোগ্রাম, পাওয়ার পয়েন্ট, ইউটিউবিং, নেট ব্রাউজিং ইত্যাদি এগুলোর ক্ষেত্রে ৪ জেনারেশন, ৫ জেনারেশন অথবা ৬ জেনারেশন এর মাদারবোর্ড নিতে পারেন। মাদারবোর্ডের জন্য ভালো ব্র্যান্ড হলো গিগাবাইট, আসুস ইত্যাদি।
মনিটর (Monitor) --
RAM --
আরও পড়ুনঃ হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচতে বিস্তারিত জানুন
আবার যদি আপনার কম্পিউটারে ১৬ জিবি RAM লাগান তাহলে আরো বেশি ভালো হবে। সে ক্ষেত্রে আপনি কম্পিউটারের স্পিডটা আরো বেশি পাবেন। RAM এর ধরন উন্নত হলে তা কম্পিউটারের গতি আরো বৃদ্ধি করবে।
হার্ডডিস্ক ড্রাইভ (HDD) --
হার্ডডিস্ক ড্রাইভ কে সংক্ষেপে HDD বলা হয়। কম্পিউটারের তথ্য হার্ডডিস্কের মধ্যে জমা থাকে। এটি কম্পিউটারের ভার্চুয়াল RAM হিসেবেও কাজ করে। হার্ডডিস্কের ভালো ব্র্যান্ড হচ্ছে স্যামসাং, ট্রানসেন্ড ইত্যাদি। এটি কেনার সময় লক্ষ্য রাখবেন সাধারণভাবে হার্ডডিক্সের স্টোরেজ ক্ষমতা বেশি হলে, বেশি তথ্য জমা রাখতে পারবে।
আরও পড়ুনঃ ঘন-ঘন মাথা ব্যথার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নিন
হার্ডডিক্সের আরপিএম বেশি হলে এর ডাটা ট্রান্সফার রেট বেশি হবে। মাদারবোডের পোর্ট সাটা হলে হার্ডডিক্সও সাটা কিনতে হবে। এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক এর ক্ষেত্রে আপনার মেইন বোর্ডের ইউএসবি ৩.০ থাকলে ইউএসবি ৩.০ হার্ডডিস্ক কেনাই ভালো।
পাওয়ার সাপ্লাইয়ার --
অনেকেই কম্পিউটার বিল্ড আপ করতে গেলে প্রসেসর, মাদারবোর্ড, গ্রাফিক্স কার্ড এগুলো নিয়ে বেশি চিন্তা করি বা ভাবি। কিন্তু পাওয়ার সাপ্লাইয়ের ক্ষেত্রে হয়তো অনেকে খুব বেশি ভাবেন না কারণ এটার ক্ষেত্রে অনেকেরই গুরুত্ব কম। কারণ এটার প্রয়োজনিয়তা অনেকে জানেন না।
এ পাওয়ার সাপ্লাইটা যদি ভালো না হয় বা সঠিকভাবে কনফিগার করতে না পারেন তাহলে কিন্তু আপনার কম্পিউটারে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন - কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে, শর্ট সার্কিট হয়ে পুড়ে যেতে পারে, অন্যান্য পার্টসগুলো দীর্ঘ সময় ভালো চলবে কিনা এগুলো অনেকাংশে পাওয়ার সাপ্লাই এর উপরে নির্ভর করে।
তাই এই পাওয়ার সাপ্লাই কম্পিউটারের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য আপনি কম্পিউটার নিতে চাইলে অবশ্যই একটি ভালো পাওয়ার সাপ্লাই নিতে পারেন।
অপটিক্যাল ডিস্ক ড্রাইভ (ODD) --
ওডিডি হলো সিডি ডিভিডি প্লেয়ার রাইডার। ওডিডি এর জন্য ভাল ব্র্যান্ড হলো স্যামসাং, আসুস ইত্যাদি। অপটিক্যাল ডিস্ক ড্রাইভ কেনার আগে মনে রাখতে হবে সিডি প্লেয়ার এবং ডিভিডি প্লেয়ার এর মূল্য পার্থক্য কিন্তু খুবই কম।
সিভি প্লেয়ার ডিভিডি ক্যাসেট প্লে করতে পারেনা। কিন্তু ডিভিডি প্লেয়ার সিডি এবং ডিভিডি ক্যাসেট দুটোই প্লে করতে পারে। আপনি চাইলে কয়েকশ টাকা বেশি দিয়ে ডিভিডি রাইডার কিনতে পারেন। ডিভিডি রাইডার দিয়ে সবই করতে পারবেন।
গ্রাফিক্স কার্ড --
ভালো গেম খেলার জন্য বা গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করার জন্য গ্রাফিক্স কার্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাফিক্স কার্ড এর মধ্যে ভালো ব্র্যান্ড হলো আসুস, গিগাবাইট ইত্যাদি। ক্লক রেট, মেমোরি বোস্ট ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিসের জন্য গ্রাফিক্স কার্ডের ক্ষমতা পরিবর্তন হয়।
আপনি যদি কোন নির্দিষ্ট গেমের প্রতি আকৃষ্ট হন অথবা নির্দিষ্ট কোন সফটওয়্যার দিয়ে যদি কাজ করেন তবে সেই সেই সফটওয়্যার এর রিকুরমেন্ট অনুসারে নির্দিষ্ট চিপসের গ্রাফিক্স কার্ড কিনবেন।
কম্পিউটারের কেসিং (Casing) --
কিবোর্ড --
মাউস --
ইউপিএস --
ডেক্সটপ কম্পিউটারের জন্য ইপিএ ইউপিএস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউপিএস দুই ধরনের পাওয়া যায়। অনলাইন ইউপিএস এবং অফলাইন ইউপিএস। এদের মধ্যে পার্থক্য হল বিদ্যুৎ চলে গেলে অনলাইন ইউপিএস অন হতে কোন সময় নেয় না।
কিন্তু অফলাইন ইউপিএস অন হতে সামান্য সময় নেয়। সম্ভাবনা কম হলেও এই সামান্য সময়ে কম্পিউটারের পাওয়ার চলে গিয়ে কম্পিউটার রিস্টার্ট হতে পারে। তাই ইউপিএস কেনার সময় এগোতে লক্ষ্য রাখবেন।
আপনার চাহিদা অনুযায়ী ইউপিএস এর পাওয়ার সিলেক্ট করবেন। মনিটরের স্কিন বড় হলে, বেশি পাওয়ারের গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করলে, উন্নত প্রসেসর হলে বেশি পাওয়ারের ইউপিএস প্রয়োজন। দোকানে আপনার কম্পিউটারের কনফিগারেশন বলতে পারলে তারা আপনাকে সঠিক ইউপিএস দিতে পারবে।
সাধারণ একটি ইউপিএস এর ব্যাকআপটাইম ২০ থেকে ২৫ মিনিট। এর চেয়ে বেশি ব্যাকআপ টাইমের ইউপিএস কিনতে হলে মূল্য বেশি হতে পারে।
টিভি টোনার বা টিভি কার্ড --
কম্পিউটারের মনিটর কে একই সাথে টিভি দেখার প্রয়োজন হতে পারে। অনেকেই এলসিডি মনিটর এবং টিভি কার্ড কিনে টিভি দেখার পদ্ধতি ঝুঁকছেন। এটা যদি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে এলসিডি মনিটর নয় এলইডি মনিটর কিনুন। এতে করে ফলাফল ভালো পাবেন।
টিভি কার্ডের সুবিধা হল এর মাধ্যমে আপনি শুধু টিভি দেখতে পারবেন না অনুষ্ঠান রেকর্ড করে আপনার হার্ডডিস্ককে জমা রাখতে পারবেন। টিভি টোনার বা টিভি কার্ড অবশ্যই আপনার মনিটরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
দোকানে আপনার মনিটরের রেজুলেশন বা মডেল বললেই তারা সঠিকভাবে টিভি কার্ড বাছাই করে দিতে পারবে। টিভি কার্ডের জন্য ভালো ব্র্যান্ড হলো এভাল মিডিয়া, রিভারভিউ ইত্যাদি।
স্পিকার --
শেষ কথা -- কম্পিউটার কেনার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল করবেন
প্রিয় পাঠক, আপনি ওপরের আর্টিকেলের আপনি নতুন কম্পিউটার কেনার আগে কি কি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে তা সম্পর্কে অনেক তথ্যই জানতে পারলেন। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনি উপকৃত হবেন এবং এর মাধ্যমে আপনার বন্ধু-বান্ধবদের উপকৃত হতে সাহায্য করবেন।আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে কিংবা আপনার কোন উপকারে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু, প্রিয়জন বা পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করবেন।
আর্টিকেলটি পড়ে তারাও উপকৃত হতে পারে। আপনার যদি আরোও কিছু জানার ইচ্ছে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। আমরা চেষ্ট করবো সেগুলোর উত্তর দেওয়ার। আজ এই পর্যন্তই। সব সময় সুস্থ্য থাকবেন এবং ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ।
এসএস রাইফেল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url