ঘন-ঘন মাথা ব্যথার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানুন - ঘন ঘন মাথা ব্যাথার কারণ কি
জরায়ু ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন ২০২৫প্রিয় পাঠক, আপনার হয়তো প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে। কিন্তু বুঝতে পারছেন না কি করবেন। তাহলে আপনার সমস্যা সমাধানে ঘন-ঘন মাথা ব্যথার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নিন। একই সাথে মাথা ব্যাথা হলে করণীয় কি? বা মাথা ব্যথা হলে তাৎক্ষণাত কি করবেন আপনার এ সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে আজকে আমরা মাথা ব্যথা সম্পর্কে বিস্তারিতসহ আলোচনা করবো। আপনি যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে মাথা ব্যথা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
নিচের এই আর্টিকেলে আমরা চেষ্টা করেছি মাথা ব্যথা কি? মাথা ব্যথা কেন হয় এবং কিভাবে মাথা ব্যথা থেকে প্রতিকার পাওয়া যায় সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার। এছাড়াও এর সাথে সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি যেগুলো জানলে আপনার অনেক উপকারে আসবে। তাহলে এবার চলুন সেই সকল বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
ভুমিকাঃ ঘন-ঘন মাথা ব্যথার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানুন
আমাদের দৈনন্দিন সমস্যার খুবই স্বাধারণ একটা সমস্যা হলো মাথা ব্যথা। অনেকেই আবার স্বাধারণত বলে থাকেন যে, মাথা থাকলে মাথা ব্যথা হবেই। এবং এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যপার। তাহলে আমরা মাথা ব্যথা নিয়ে এত চিন্তিত কেন? মাথা ব্যথার অভিজ্ঞতা হয়নি এমন মানুষ পাওয়া খুবই দুষ্কর। প্রতিটা মানুষেরই জীবনের কোন না কোন সময় মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। মাথা ব্যথার সাথে মাথার পুরো অংশটাই জরিয়ে থাকে। এই যেমন ধরেন নাক, কান, চোখ, কপাল সবকিছুই আমাদের মাথার সাথে সম্পৃক্ত। মাথা ব্যথার অনেক কারন আছে।
মাথা ব্যথা কি?
স্বাভাবিক ভাবে বলা হয় মস্তিষ্কে ব্যথা, চোখ বা কপালে ব্যথা এসব কারনে মাথা ব্যথার উৎপত্তি হয়ে থাকে। আমাদের মাথা কিন্তু খুব বিশাল বা খুব জটিল একটি জিনিস যা একটি কম্পিউটার এর মত। এটা সারাদিন কাজ করে।
আরও পড়ুন -- শরীরের ফিটনেস ধরে রাখার সহজ উপায় ২০২৫
কম্পিউটার বা কোন মেশিনকে যেমন সারাদিন কাজের শেষে বিশ্রাম দিতে হয় ঠিক তেমনি আমাদের মাথাকেও সারাদিন কাজ করার পর অবশ্যই বিশ্রাম দিতে হবে। বিশ্রাম ছাড়া আমরা যদি বেশিক্ষণ মাথাকে কাজ করাই তাহলে মাথা ব্যথা হতে পারে। বৈজ্ঞানিক ভাবে চিন্তা করলে প্রায় ১৫০ এর বেশি ধরনের মাথা ব্যথা রয়েছে। তবে মাথা ব্যথাকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন --
- প্রাইমারি হেডেক (Primary Headache)
- সেকেন্ডারি হেডেক (Secondary Headache)
প্রাইমারি হেডেক (Primary Headache) কি?
প্রাইমারি হেডেক বলতে প্রাথমিকভাবে যে মাথা হয় সেটাকে ব্যথাকে বোঝায়। এই মাথা ব্যথার কোন উৎপত্তিস্থল পাওয়া যায় না কিন্তু মাথা ব্যথা করে। তবে প্রাইমারি হেডেক খুব জটিল কোন বিষয় না। প্রাইমারি হেডেক মূলত তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন --
- ক্লাস্টার হেডেক (Cluster Headache)
- টেনশন হেডেক (Tension Headache)
- মাইগ্রেন হেডেক (Migraine Headache)
ক্লাস্টার হেডেক (Cluster Headache) -- ক্লাস্টার হেডেক এর প্রকৃত কারন আজও জানা যায়নি।অনেকেরই চোখের চারপাশে ব্যথা হয়ে থাকে। তখন মাথা ব্যথা অনুভূত হয়। চোখের চারপাশের এই ব্যথাকে বলা হয় ক্লাস্টার হেডেক (Cluster Headache)।
আরও পড়ুন -- কালোজিরার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
টেনশন হেডেক (Tension Headache) -- আমরা বিভিন্ন কাজ-কর্ম , ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা অন্য যেন কোন বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা বা দুশ্চিন্তা যার ফলে মাথা ব্যথা করতে পারে। এই ব্যথাকে টেনশন হেডেক (Tension Headache) বলা হয়।
মাইগ্রেন হেডেক (Migraine Headache) -- মাথার একপাশে কম্পন দিয়ে মাঝারি বা তিব্র ধরনের ব্যথা হয়ে থাকে। তবে কখনও কখনও এই ব্যথা একপাশ থেকে শুরু হয়ে সেই পাশের পুরো অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং এই ব্যথার সাথে কখনও কখন বমি বমি ভাব কিংবা দৃষ্টি বিভ্রমও হতে পারে। এরকমটা হলে বুঝতে এটি মাইগ্রেন হেডেক (Migraine Headache)। যারা রোদ্র বা ধূলা-বালিতে যায় তাদের ক্ষেত্রে মাইগ্রেন হেডেক বেশি হতে পারে।
সেকেন্ডারি হেডেক (Secondary Headache) কি?
সেকেন্ডারি হেডেক বলতে যে মাথা ব্যথার কোন কারন আছে যেমন - মাথার চিকিৎসা করার মত বা মাথা ব্যথা ভালো করার মত কোন কারন পাওয়া যাচ্ছে সেটাকে বলা হয় সেকেন্ডারি হেডেক।
আরও পড়ুন -- পেটের চর্বি কমানোর সহজ উপায় ২০২৫ সম্পর্কে জানুন
কোন কারন ছাড়াই যদি হঠাৎ মাথা ব্যথা হয়, এর সাথে যদি বমি বমি ভাব হয়, যদি একপাশ অবস মনে হয় বা কথায় জড়তা হয়, চোখে দেখতে কোন জটিলতা মনে হয়, অবসাদ গ্রস্ত বা জ্ঞ্যন শক্তি ধিরে ধিরে কমে যায় সেই সব মাথা হলে তখন তা অবশ্যই উদ্বেগজনক এবং চিন্তার বিষয়।
এরকম মাথা ব্যথা হলে গুরুত্ব দিতে হবে। কারন আমাদের মাথার ভিতরে কোন জটিল রোগ থাকলে তখনই এসব মাথা ব্যথা দেখা দেয়। যদি ব্রেনের মধ্যে রক্তক্ষরণ তাহলে তার কারনে আমাদের মাথার ভিতরে চাপ বাড়তে থাকে এবং মাথা ব্যথা করে।
ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি কি
মাথা বা ব্রেইনের কোন সমস্যা যেমন - ব্রেইনের রক্ত নালিতে ইনফেকশন, সিজার, টিউমার এগুলোর কারনে মাথা ব্যথা হতে পারে। যদি এই ধরণের মাথা ব্যথা হয় তাহলে আর দেরি না যত দ্রুত সম্ভব একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো উচিত। ব্রেনের ভিতরে টিউমার বা অন্য কোন কিছুর কারনেও মাথা ব্যথা হতে পারে। তবে টিউমার হলে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
ঘন ঘন মাথাব্যথার লক্ষণ
ঘন ঘন মাথাব্যথা বিভিন্ন উপায়ে প্রকাশ পেতে পারে এবং নির্দিষ্ট লক্ষণগুলি অন্তর্নিহিত কারণ সম্পর্কে সূত্র প্রদান করতে পারে। ঘন ঘন মাথাব্যথার কিছু সাধারণ লক্ষণ নিম্নরূপ --
- থ্রোবিং বা স্পন্দন ব্যথা -- এই ধরনের মাথাব্যথা প্রায়ই মাইগ্রেনের সাথে যুক্ত থাকে এবং এটি দুর্বল হতে পারে।
- নিস্তেজ, বেদনাদায়ক ব্যথা -- টেনশন-টাইপ মাথাব্যথা একটি অবিরাম মাথাব্যথা দ্বারা চিহ্নিত করা হয় যা ঘন্টা বা এমনকি কয়েক দিন স্থায়ী হয়।
- তীক্ষ্ণ, ছুরিকাঘাতে ব্যথা -- এই মাথাব্যথা একটি গুরুতর মূল কারণ নির্দেশ করতে পারে, যেমন স্ট্রোক বা ব্রেন টিউমার।
- আলো, শব্দ বা নড়াচড়ার প্রতি সংবেদনশীলতা -- ঘন ঘন মাথাব্যথায় আক্রান্ত অনেক ব্যক্তি পরিবেশগত উদ্দীপনার প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ায়, যা ব্যথাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- অবিরাম মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, এবং বমি -- গুরুতর মাথাব্যথা, বিশেষ করে মাইগ্রেন, প্রায়ই বমি বমি ভাব এবং বমি হয়।
- ক্লান্তি এবং মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে অসুবিধা -- ঘন ঘন মাথাব্যথার সাথে যুক্ত ব্যথা এবং অস্বস্তি ক্লান্তির অনুভূতি এবং জ্ঞানীয় ক্রিয়াকলাপের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
মাথা ব্যথার গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয়
মাথা ব্যথা অনেক ধরণের হয় এবং অনেক রকম ভাবেই মাথা ব্যথা করে। তবে এগুলোর মধ্যে তিনটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে এবং জানতে হবে।
- দিনে কতবার মাথা ব্যথা করে।
- মাথার কোন জায়গাটা ব্যথা করে।
- এবং কত বেশি মাথা ব্যথা করছে।
ওপরের তিনটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেসব মাথা ব্যথা স্বাধারণত ঘুম বা বিশ্রাম দেওয়ার পরও মাথা ব্যথা রয়ে যায় বা আবার হয় তাহলে বুঝতে হবে সেই সব মাথা ব্যথা জটিল কোন কিছু।
মাথা ব্যাথা হলে করণীয় কি
যদি স্বাধারণ মাথা ব্যথা হয় এবং সেটা ঘুম বা বিশ্রামের ফলে কমে যায় তাহলে আমাদের সেই মাথা ব্যথা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করার কিছু নেই। কিন্তু যদি আমাদের পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেওয়ার পরও মাথা ব্যথা ভালো না হয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মাথা ব্যথার সাথে আমরা যদি বার বার বমি করি তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে চিকিৎসকের সরণাপন্ন হতে হবে।
আরও পড়ুন -- কম্পিউটার কেনার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল করবেন
চিকিৎসকের সরণাপন্ন হলে চিকিৎসক আমাদের মাথা ব্যথার উৎস বা কারন পরিক্ষার মাধ্যমে খুঁজে বের করে চিকিৎসা করবেন।
মাথা ব্যথার পরীক্ষা-নিরীক্ষা
আমাদের যখন মাথা ব্যথা করে তখন এর কারন গুলো জানা খুবই জরুরী। মাথা ব্যথার কারন খুজতে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা আছে। নিচে সেগুলো দেওয়া হলো ---
- পিএনএস এক্স-রে (PNS X-Ray OM View)
- সিটি স্ক্যান অব ব্রেইন (CT Scan of Brain)
- এমআরআই অব ব্রেইন (MRI of Brain)
মাথার এক্স-রে করলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাথা ব্যথার কারন খুজে বের করা যায়। যেমন - সাইনোসাইটিস এবং ন্যাজাল অবসট্রাকশন। এই কারনগুলো একটা স্বাধারণ পিএনএস এক্স-রে (X-Ray PNS OM View) করার মাধমেই বের করা সম্ভব। এটা গেলো স্বাধারণ পরিক্ষা।
আরও পড়ুন -- আর্টিকেলে স্ক্রিনশট যুক্ত করার নিয়ম
এ্ররপরে আছে উন্নত প্রযুক্তি যেমন - মাথার সিটি স্ক্যান বা এম.আর.আই এই দুইটা পরিক্ষা করতে পারলে অবশ্যই মাথায় যদি কোন রোগ থেকে থাকে তাহলে সেটা সনাক্ত করা সম্ভব। আমরা যারা মাথা ব্যথা নিয়ে চিন্তা করি বা বার বার মাথা ব্যথা হলে মনে হয় যে মাথার ভিতরে কোন টিউমার জাতীয় বা অন্য কিছু আছে কি না।
সেই ক্ষেত্রে মাথার সিটি স্ক্যান বা এম.আর.আই করতে পারলে ব্রেনে টিউমার বা রক্তক্ষরণ হয়ে রক্ত জমাট বেধে আছে কি না তা খুব সহজেই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। আর এই রোগ নির্ণয়ের ফলে ডাক্তার ঔষধ বা অপারেশন এর মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ্য করে তোলেন।
লেখকের মন্তব্যঃ ঘন-ঘন মাথা ব্যথার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আপনি ওপরের আলোচনা থেকে মাথা ব্যথা কি? মাথা ব্যথা কেন এবং কি কি কারনে হয়? এবং কিভাবে মাথা ব্যথা থেকে সুস্থ্য থাকবেন তা জানতে পারলেন। তাই আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনি উপকৃত হবেন এবং এর মাধ্যমে আপনি নিজে এবং আপনার প্রিয়জনদের মাথা ব্যথা থেকে প্ররিত্রান পেতে সাহায্য করবে।
আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে কিংবা আপনার কোন উপকারে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু, পিয়জন বা পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করবেন। আর্টিকেলটি পড়ে তারাও উপকৃত হতে পারে। আপনার যদি আরোও কিছু জানার ইচ্ছে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। আমরা চেষ্ট করবো সেগুলোর উত্তর দেওয়ার। আজ এই পর্যন্তই। সব সময় সুস্থ্য থাকবেন এবং ভালো থাকবেন ধন্যবাদ।
এসএস রাইফেল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url